আমদানিকারক থেকে উৎপাদক
ইলেকট্রনিক পণ্যের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ একসময় শুধুই আমদানিকারক ছিল। বর্তমান সময়ের সবচেয়ে জরুরি মোবাইল ফোন উচ্চমূল্যে আমদানি করতে হতো বিদেশ থেকে। আন্তর্জাতিক বাজারে এসব পণ্যের দাম কমলেও আমদানি শুল্ক ও অন্যান্য খরচ মিলিয়ে একটি মোবাইল ফোনের দাম কিছু দিন আগেও সাধারণ মধ্যবিত্তের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে ছিল। সাম্প্রতিক সময়ে দেশেই মোবাইল ফোন সংযোজন ও উৎপাদন করা হচ্ছে। স্যামসাং, ওয়ালটন, সিম্ফনি, টেকনো, ফাইভ স্টার এখন বাংলাদেশে তাদের কারখানা করেছে। আসছে হুয়াওয়েসহ আরো অনেক প্রতিষ্ঠান। আন্তর্জাতিক মানের এসব মোবাইল ফোন দেশে উৎপাদন হলে প্রতিযোগিতামূলক বাজারে তার দাম কমবে। সাধারণ ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে পারবে দেশে তৈরি মোবাইল ফোন। সম্প্রসারিত হবে দেশের বাজার। একই সঙ্গে নতুন নতুন কারখানা গড়ে ওঠার ফলে দেশের অভ্যন্তরে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। নতুন নতুন মোবাইল ফোন সংযোজন ও উৎপাদনের পাশাপাশি রপ্তানি করতেও উদ্যোগী হয়েছে কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান। এটি একটি ভালো উদ্যোগ। নিজেদের বাজারের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করা গেলে ব্র্যান্ড বাংলাদেশ নতুন পরিচিতি পাবে। মোবাইল ফোন উৎপাদন ও সংযোজনে সাফল্য লাভের পর যন্ত্রাংশ তৈরিতে যদি কোনো প্রতিষ্ঠান এগিয়ে আসে, তাহলে দেশের ইলেকট্রনিক পণ্যের বাজারে নতুন মাত্রা যুক্ত হবে। বাংলাদেশ সম্পর্কে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও নতুন ধারণা তৈরি হবে।
শুধু ইলেকট্রনিক পণ্য নয়, আরো অনেক পণ্যেই বাংলাদেশ উৎপাদক হিসেবে এগিয়ে আছে। দেশের বেসরকারি উদ্যোক্তাদের নেওয়া চ্যালেঞ্জ যাতে সাফল্য অর্জন করতে পারে, সে জন্য সরকারকেও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। শুধু মোবাইল ফোন নয়, অন্যান্য ইলেকট্রনিক পণ্যও যাতে দেশে উৎপাদন হতে পারে সে বিষয়ে সচেষ্ট হওয়া প্রয়োজন। একটি পরিসংখ্যান বলছে, গত ছয় মাসে দেশে মোবাইল আমদানি অন্তত ১৭ শতাংশ কমেছে। এই হার আরো কমিয়ে আনতে হবে। দেশে প্রতিবছর যে পরিমাণ মোবাইল হ্যান্ডসেট আমদানি করা হয়, তাতে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার প্রয়োজন হয়। দেশে তৈরি হ্যান্ডসেট দেশের চাহিদা মেটাতে পারলে বৈদেশিক মুদ্রার সংস্থান হবে। আবার বিদেশে রপ্তানি করা গেলে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করাও সম্ভব হবে। আন্তর্জাতিক বাজারের বড় বড় প্রতিষ্ঠানকে বাংলাদেশে তাদের প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার জন্য আহ্বান জানানো যেতে পারে। দেশে মোবাইল ফোন উৎপাদন ও সংযোজন বাড়িয়ে এসব পণ্য ভোক্তাদের কাছে জনপ্রিয় করা গেলে ভবিষ্যতে অবৈধ আমদানির বাজারও বন্ধ হয়ে যাবে।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নতুন নতুন পণ্য আসছে। নতুন নতুন প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। পরিবর্তিত বিশ্বের সঙ্গে সংগতি রেখে নতুন প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার পাশাপাশি পণ্য বিপণনে আন্তর্জাতিক বাজারকে লক্ষ্য করা যেতে পারে। আমরা আশা করি, সব ধরনের পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েই দেশি পণ্যের বাজার সম্প্রসারণে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া হবে।